Sunday, August 21, 2011

বাসর রাতের RJ দম্পতি (রম্য গল্প)

১.
হৃদয়+রাহা। ওরা দুজনেই ছিল ভার্সিটিতে আমাদের বন্ধুদের মধ্যমণি। তারা দুজনেই কথার তুবড়ি ফোটাতে পারত। ওরা এত দ্রুত কথা বলতে পারতো যে সবাই বিস্ময়ে হা হয়ে যেত। এমন কী ওরা রাত জেগে যখন নিজেদের মোবাইলে প্রেম রসায়নের আবিষ্কৃত অনাবিষ্কৃত সূত্রাবলী চর্চা করত তখনও তারা নিজেদের স্টাইলেই কথা বলত।
একদিন মিতুল বলল
-আচ্ছা তোরা যে রাত জেগে মোবাইলে এত কথা বলিস... এত বিল পে করিস কীভাবে?
হৃদয় বলল,‘আমরা কথা বেশি বলি ঠিকই কিন্তু আমাদের বিল বেশি পে করা লাগেনা!’
-এটা কেমন কথা? কথা বেশি বলে কম বিল পে করিস... বুঝলাম না...
- প্রথমত আমাদের নাম্বার দুটো এফএনএফ করা আছে আর সবচে গুরুত্বপূর্ণ যেটা সেটা হল আমরা তো ৩০ মিনিটের কথা ১০ মিনিটেই শেষ করে ফেলি!

২.
এভাবেই চলছিল হৃদয় রাহার ভালবাসাবাসির দিনকাল। কিন্তু মিতুলের এক আইডিয়াতে ওদের জীবন বদলে গেল। মিতুল বলল
- তোরা দুজন যখন এতই দ্রুত কথা বলতে পারিস তখন তোরা রেডিওর আরজে অডিশানে যাচ্ছিস না কেন?
- হ্যাঁ ঠিক বলেছিস একবার ট্রাই করে দেখা যেতে পারে! হৃদয় বেশ উৎসাহী গলাতেই বলল...

অডিশান দিয়ে ওরা দুজনেই সিলেক্টেড হল আরজে হিসেবে। রেডিওর নাম ‘রেডিও শুনিও’ তবে ওদের জয়েনিং হবে বেশ কিছুদিন পরে অর্থাৎ অপেক্ষমান নিয়োগ... অন্য আরজে শিফট হলেই ওরা জয়েন করতে পারবে।

৩.
জবটা পেয়ে ওরা দুজনেই বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠল...আমরা সবাই মিলে ধরলাম একটা সেলিব্রেশান পার্টি দেয়ার জন্য। ওরা অমত করল না...

পেটুক রিংকু খাচ্ছে তো খাচ্ছেই... ওর পেট যখন ফুলে ফেঁপে ঢোল তখন ও বলল
- আচ্ছা তোরা আর কেউ কোথাও অডিশান দিচ্ছিস না? টিকে ফিকে গেলে এরকম জম্পেশ একটা খানা পাওয়া যেত!
আমি বিষম খেলাম! সঙ্গে বুঝি অন্যরাও... আমি বললাম
-রিংকু তোর এখনও পেট ভরেনি?
-ভরেছে কিন্তু কেমন যেন একটা ক্ষুধা ক্ষুধা ভাব...
-এই রেস্টুরেন্টের সব খাবার খেয়ে ফেললেও তোর এই খু খু ধা ধা ভাব যাবে না!
হা হা হা হা হা ... হাসির রোল ওঠে। হৃদয় ওর জন্য আরেকটা স্যান্ডউইচ অর্ডার দিল!
- হৃদয় আমি তোর জন্য দোআ করি তুই আর রাহা সারাজীবন আর জে হয়ে থাক!
- হায়! হায়! রিংকু তুই তো বদ দোআ করে ফেললি! সারাজীবন আর জে হয়ে থাকলে সংসার চলবে? উড্র কর দোআ উড্র কর... বিস্মিত হৃদয় আকুতি করে
- ঠিক আছে! দোআ উড্র করা হইল! ইয়া আল্লাহ হৃদয় রাহাকে যেন বেশিদিন আরজে হয়ে থাকতে না হয়!

খাওয়ার পর্ব শেষে ক্যাজুয়াল আলোচনা শুরু হল... কে কীভাবে হৃদয় রাহার শো তে এসএমএস করবে... ওরা কীভাবে উত্তর দিবে এ নিয়ে বিতং আলোচনা! আমি রিংকুকে খেয়াল করছিলাম! ও এখনো চোখ ঘুরিয়ে ফাস্ট ফুডের দোকানটায় আরো কী কী খাবার আছে তা মনে হল গুণে গুণেই দেখছে!

আমি ভাবলাম রিংকু খাবার গুণতে থাকুক আমি বরং আলোচনায় যোগ দিই...
- আচ্ছা হৃদয় ধর তোরা বিয়ে করলি... বিয়ের পর তোর শো শুরু হবে রাত ১২ টায় আর রাহার ভোর ৬ টায়... তখন তোরা কী করবি!
- কী আর করবো! ক্ষ্যাতা বালিশ আর বউ নিয়ে রেডিও শুনিও র কার্যালয়ে চলে যাব!
- যদি ক্ষ্যাতা বালিশ আর বউ এ্যালাউ না করে?
- মানবাধিকারের দাবীতে তোদের নিয়ে মানববন্ধন করব! ... হা হা হা হা
রাহা একটু চুপচাপই ছিল। কে জানে টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে এই দুঃশ্চিন্তায় কী না! নারীদের গণিতপ্রীতি তো সর্বজনবিদিত...সে হঠাৎ বলল
- কখন বিয়ে হবে তার ঠিক নেই এখন এসব ভেবে লাভ আছে?
- আমি তো জানি বিয়ে করে ফেললেই হয়ে যায়!...আমি বলে উঠি। হৃদয় বলল
- আরে তাই তো! বিয়েটা করে ফেললেই তো হয়! এখনো জয়েনিং এর কিছু দেরি আছে বলেই মনে হচ্ছে! কী বল রাহা?
- ঠাট্টা করছ?
- না না সত্যি বলছি ঠাট্টা না! আমি সত্যি বলছি... আমি আজ রাতে ভাল করে ভাবব! তুমিও ভেবো দেখো... সেরকম হলে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই সেরি ফেলি কী বল?

সাবই হো হো হো করে সায় দিল। রিংকুর এই বিয়েতে আগ্রহ বেশি দেখা গেল। ও বোধহয় পোলাও কোর্মার গন্ধ অলরেডি পাওয়া শুরু করেছে! রাহা বেশ বিরক্ত হল...
- সুমন তোর রসিকতা করার অভ্যাস এখনো গেল না? এই রসিকতার জন্য তোর গার্লফ্রেন্ডই ভেগে গেল তারপরও...
- আহা বেচারাকে আঘাত দিচ্ছ কেন? আমার কাছে প্রস্তাবটা খারাপ লাগেনি!
- আশ্চর্য আমি প্রস্তাব দিলাম কখন? আমি তো রসিকতা করছিলাম! ভাই আমাকে আর যাই বল ঘটক হতে বলিস না! রাহার পিতার গোঁফ এখনো আমি স্বপ্নে যতবারই দেখি ততোবারই আঁতকে উঠি! হা হা হা... রিংকু কিছু বুঝতে না পেরে বলল, কী হয়েছে রাহার আব্বুর গোঁফের? মিতুল বলল
- ও রিংকু সেদিন তুই এক খানা মিস করেছিলি! রাহাদের বাসায় বিকেলে আমরা সবাই বেড়াতে গেলাম... উফ্ সে যে কী খানা! রাহার আম্মুর হাতে যেন জাদু আছে! কোন শহুরে মহিলা এত ভাল পিঠা বানাতে পারে, না খেলে কোনদিনই বিশ্বাস করতে পারতাম না।
- বলিস কী? তোরা কবে গেলি? আমাকে কিছুই বললি না কেন?
আমি উত্তর দিলাম
- তুমিও চান্দু শীতের পিঠা খাইছ তয় তখন তুমি নিজের গ্রামে... নিজের মায়ের হাতে... আমরা শহরে বন্দরে থাকি... রাহার আম্মা না খাওয়াইলে আমগো কপালে কী আর আছে!
- থাক সুমন অয়েলিং কম হোক! বেলী রোডে বান্ধবী নিয়ে কে প্রায়ই পিঠা খেতে যেত তা আমাদেরও জানা আছে!
- রাহা তোরা তো জানবিই! কারণ আমার আর মুক্তার উল্টো দিকে তুই আর হৃদয়ইতো ছিল! তোর কাছে মনে হয় তোর আম্মুর পিঠার চাইতে বেলি রোডের পিঠাই বেশি ভাললাগে কী বলিস?
রিংকু বলল
- থাক থাক ঝগড়া চাই না আজকের এই মহতী খানা খাদ্য খাদন আয়োজনে... রাহার আব্বুর গোঁফের গল্পটা বল না!
হৃদয় বলল আমি বলছি শোন!
- রাহার আব্বা সেদিন অফিস থেকে এসে আমাদের সবার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে... উনি সবার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করছিলেন... হঠাৎ সুমনের সাথে হ্যান্ডশেক করতে গিয়ে উনি ওনার ইয়া বিশাল গোঁফ নিয়ে উনার মুখ প্রায় ওর মুখের কাছে নিয়ে আসেন... ‘তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি!’ সুমন গোঁফ দেখে পিছিয়ে সরে বলল,‘ দেখতেই পারেন তবে আমি কখনো আপনাকে দেখিনি!
- কীভাবে বুঝলে?
- এই গোঁফো মুখ কোথাও দেখলে আমার সারাজীবন মনে থাকতো!
সুমনের রসিকতা শুনে উনি আর বাকী সবার সাথে হ্যান্ডশেকই করলেন না! ভেতরে চলে গেলেন। পরে উনি রাহাকে দুকথা শুনিয়ে দিয়েছিলেন!
- সুমন রসিকতা যত্রতত্র করে বসে! এটাই সমস্যা! রাহা গম্ভীর মুখে জবাব দেয়...

আলোচনা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে ভেবে হৃদয় সেদিনের মতো রিংকুর নামকরণ ধার করে মহতী খানা খাদ্য খাদন অনুষ্ঠানের ইতি টানল... চলে যাওয়ার সময় হৃদয় আমাকে এক পাশে ডেকে বলল,‘ওকে আজ রাতেই রাজি করাব! এবং এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ে হবে!

৪.
হৃদয় ঠিকই ম্যানেজ করে ফেলল। দু’পরিবারের কথা বলা আই মিন বাচালতার বিরাট ঐতিহ্য তাদের আতœীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করল!
আমরা হৈ হল্লা করছি... তবে আমি নিজেকে রাহার আব্বা আর তার গোঁফ থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করলাম...

কিন্তু শেষ রক্ষা হল না! তিনি হঠাৎ আমাকে কাছে ডেকে বসলেন...
- সেদিনের ঐ ব্যবহারে আমি সত্যিই লজ্জিত... রসিকতা জিনিসটা আসলে খারাপ না! আর আমার এই গোঁফ যে বেশ ভয়ংকর দর্শন তা আজ আমাকে অনেকেই বলল... আমি মনে মনে চিন্তা করি, ও তাহলে এই ব্যাপার! বয়সে ছোট হলেই সত্য বললে তা বেয়াদবি হয়ে যায় আর বয়সে বড় হয়ে মিথ্যাও সত্য বলে চালিয়ে দেয়া যায়!
- খাওয়া দাওয়া কেমন উপভোগ করছ?
- আমার একটু খাওয়াদাওয়ায় সমস্যা আছে! আমি বেশি কিছু খেতে পারি না! আই ইট টু লিভ নট লিভ টু ইট! তবে হ্যাঁ আমাদের বন্ধু রিংকুর রি-এ্যাকশানে মনে হচ্ছে রান্না অসাধারণ হয়েছে... কারণ দুবার খেয়েও তার পেট ভরেনি!
- হা হা হা হা হা হা ... রাহার আব্বা এই সাধারণ রসিকতায় এত অসাধারণ মানে চিৎকার করে হাসি দেবেন তা আমি ভাবতেই পারিনি! নব্য রসিক হলে যা হয় আর কী!

বিয়ের অনুষ্ঠান মূলত দু’ভাগে বিভক্ত। একটা হল হাসি আর একটা কান্না... আপনি হয়ত বলবেন খাওয়ার পর্ব ও আছে... খাওয়াটাকেও আপনি হাসির অংশে ধরুন না! আমার মত কজন আছে যে খাওয়ার কথা শুনলে খুব একটা উৎফুল্ল হয় না? বরং রিংকুর মতো লোকই বেশি! যারা খাওয়ার কথা শুনলে আকর্ণবিস্তৃত হাসি দেবে মানে মুখটাকে ডানে বামে প্রসারিত করে খাওয়ার জন্য মুখ হা করার প্রাথমিক প্রস্তুতি সেরে রাখবে! এরপর খানা সামনে এলে ডানে বামে প্রসারিত মুখটাতে যে দাঁতের গেট আছে তা উপরে নিচে তুলে দিয়ে ‘মহতী খানা খাদ্য খাদন অন্দরে প্রেরণ’ শুরু করবে!

যাই হোক সব ধরণের হাসির পর্বই শেষ। এবার কান্নার পালা... কিন্তু কেউ কাঁদছে না! ব্যাপার কী!
যার সবচে বেশি কাঁদার কথা, রাহার মা, তাকে দেখা গেল তখনো বেয়াইনের সাথে কথা বলেই যাচ্ছেন...
আমি বললাম, খালাম্মা হাসির পর্ব শেষ। আপনাকে যে এখন একটু কাঁদতে হবে! সবাই হেসে উঠল... কিন্তু সবচে’ বেশি কে হাসলেন এ কথায় তা বোধহয় বলার দরকার নেই!
- ছেলেটা খুবই রসিক! ওর রসিকতার প্রমাণ আমি আগেই পেয়েছি!
হাসাহাসির আধিক্যে কান্নার পর্ব খুব একটা জমল না বা বলা যায় এতো কথা আর আনন্দের মধ্যে কান্নার অবকাশ কই! কিন্তু নিয়তি বোধহয় কান্নাগুলো দুঃশ্চিন্তাগুলো শেষ অংশের জন্য জমিয়ে রাখলেন!

৫.
সব অতিথিরা ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছেন... বর-কনে বাহী গাড়িও একসময় চলা শুরু করল...
এই গল্প এখানেই শেষ হওয়া উচিত ছিল। ঐযে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পের মতো,‘ ঘরে কপাট পড়িল... তাহার পরে কী হইল কেহ জানে না!’

কিন্তু হৃদয়রাহা দরজায় কপাট দিবার পূর্বেই মোবাবইল বাজিয়া উঠিল...
- কী বললেন মামুন ভাই? আজ রাতে ডিউটি? আজ আমার বিয়ের রাত... আর আপনি বলছেন...
- কী করব ভাই বল! কাউকেই ম্যানেজ করতে পারলাম না! আর এ ধরণের অত্যাচার স্যারেরা নতুনদের উপরই চাপায়!
- তাই বলে বিয়ের রাতে?
- দ্যাখ আামি স্যারকে এই কথা বলছিলাম... উনি বললেন ডিউটি করলে জব আছে নইলে নাই! শোন আমি বলি কী তুমি চলে আস... মাত্র তো দুঘন্টা শো...১২ টা থেকে রাত ২ টা...
হৃদয়ের কথা শুনে রাহা কান্নাকাটি শুরু করে দিল। ঐদিকে রাহার বাবা-মাও খবর পেয়েছে হৃদয় বাসর রাতে ডিউটি করতে যাচ্ছে... যে কান্না উনি বিদায়বেলায় কাঁদতে পারেননি তা এখন সুদে আসলে কেঁদে ফেলছেন! আমার খারাপ লাগল নব্য রসিক রাহার পিতার জন্য... শুনলাম তিনিও না কী কাঁদছেন... কান্না জিনিসটা রসিকরা এম্নিই পছন্দ করে না তার উপর নব্য রসিক হলে তো চাপটা আরো বেশি পড়ে!

শুরু হলো আরজে হৃদয়ের পথচলা... আপনারা শুনছেন ‘রেডিও শুনিও’! এফএম... আর এই রাত জাগা রাতে আপনাদের সঙ্গে আছি আমি আরজে হৃদয়! আজ রাতে আপনাদের যাদের হৃদয় মানে মন খারাপ তাদের মন মানে হৃদয় ভালো করার জন্য আমি আরজে হৃদয় আপানাদের শোনাব... হ্যাঁ তাহলে আর দেরি কেন...
রেডিও শুনতে শুনতে আমি ভাবি, নিজেরই মন ভাল নাই তুই আবার আরেকজনের মন ভাল করবি কেমনে?
হঠাৎ অনুষ্ঠানের একটি এসএমএসে কান আটকে গেল... হৃদয় পড়ছে ...
মহাখালী থেকে জীবনসাথী জানতে চেয়েছেন... “এমন দিনে কেউ এমন করে? নতুন বউ ফেলে রাতে অফিস করে!’”

আমি হৃদয়ের আরজে’ইয় দক্ষতায় অবাক হলাম। ও হাসি সামলাল কী করে? কারণ এই এসএমএস যে রাহা করেছে তাতে আর সন্দেহ কী!
হৃদয় জবাব দিল...‘জীবনসাথী তোমাকেই বলছি আর কাউকে না হোক আরজে দের এমন করা লাগতেই পারে... তুমি অপেক্ষা কর! হয়ত তার মনটাও ছটফট করছে! মনের ছটফটানি দূর করার জন্য এখন প্লে করব গান...

দুঃখ আমার, আমার বাসর রাতের পালঙ্ক!

আমি বুঝলাম না এই গান কীভাবে মনের ছটফটানি দূর করবে?
আমি রাহাকে কল দিলাম। বলাই বাহুল্য রাহাও ছটফটানি দূর করার গান শুনছিল...

বেচারি কল রিসিভ করে কান্নার জন্য ঠিকমতো কথাই বলতে পারল না!...
গান চলছে... বাসর রাতের পালঙ্ক... আমি ভাবি রাহার ছটফটানি দূর হওয়া দূরে থাক... এই গান শুনে ক্ষোভে দুঃখে সে বাসর রাতের খাট পালঙ্ক ভেঙ্গে পড়ে গেল কী না সে খোঁজ নেয়া দরকার...!

জীবন তো এগিয়ে যায়... একসময় রাত দু’টা প্রতিদিনই বাজে। কিন্তু আজ রাত ২ টা রাহা সহ আমাদের সব বন্ধুদের জন্য ছিল অতি আকাঙ্খিত...
রাত দু’টায় ডিউটি শেষে হৃদয় বাসায় ফিরছিল মোটরসাইকেলে। কাওরান বাজার আসতেই ওর মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হয়...
মোটর সাইকের ঘিরে একটি ছোটখাট জটলা। সামান্য দূরে হেঁটে যাচ্ছে পুলিশ। এধরণের জটলা দেখে তারা অভ্যস্ত তাই তারা দেখেও না দেখার ভাণ করল।
কিন্তু হৃদয়ের উপস্থিত বুদ্ধি ওকে বাঁচিয়ে দিল... ও কোনরকম বাধা দেয়ার চেষ্টা না করে খুব খুশি মনেই দেড়লাখ টাকার মোটর সাইকেল ছিনতাইকারীদের হাতে তুলে দিল।
ছিনতাইকারীরা বোধহয় এতো সহজে কাজ হাসিল হবে তা ভাবেনি! তাই মোবাইল মানি ব্যাগের মতো ছোটখাট জিনিসের দিকে আর হাত বাড়াল না!

ছিনতাইকারী যতক্ষণ ছিল ততক্ষণ হৃদয়ের মাথা ঠিকই কাজ করছিল। কিন্তু মুক্তি পেয়ে একটু আবেগের বশবর্তী হয়েই সে ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলল... সে রাহাকে কল দিয়ে ঘটনা বিস্তারিত বলতে যাবে এমন সময় যখনই ছিনতাইকারী শব্দটি রাহা শুনল সাথে সাথে সে অজ্ঞান! হৃদয় হ্যালো হ্যালো করছে... কিন্তু অজ্ঞান ব্যক্তির সাথে কথা বলা যায় এমন টেকনোলজি এখনো আবিষ্কার হয়নি!
এবার হৃদয় আর ভুল করল না... সে তার বাবা-মা কাউকেই কল দিল না... ঠান্ডা মাথায় সে মিতুল কে কল দিল। মিতুলও হৃদয়ের শো শুনছিল... ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ শুনে মিতুল ধানমন্ডির বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হল...

মিতুল আর হৃদয় যখন মহাখালীর বাসায় পেীঁছল তখনও রাহার জ্ঞান ফেরেনি! ডাক্তার এসে বিদায় নিয়েছেন... রাহার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে ... জ্ঞান ফেরা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র...
রাহা চোখ মেলে যেই তাকিয়েছে সে দেখল তার হৃদয় পুরোটা অক্ষত অবস্থায় তার পাশে বসে আছে...রাহা নিশ্চিন্ত মিতুলও নিশ্চিন্ত!
মিতুল নিশ্চিন্ত হয়ে আমাদেরও দুঃশ্চিন্তা দূর করার ব্যবস্থা করে গাড়ি নিয়ে বিদায় নিল...

অতঃপর আবার রবীন্দ্রনাথ... ‘ঘরে কপাট পড়িল... তাহার পরে কী হইল কেহ জানে না!’

No comments:

Post a Comment